শিশুর ঘুমের রুটিন

শিশুর ঘুমের রুটিন কিভাবে ঠিক করবো?

“সন্তান সারারাত জেগে থাকে, বেলা করে উঠে!” “বাচ্চার সাথে কিছুতেই যে আমাদের ঘুমের রুটিন মিলছে না!” “আমার বাচ্চাটা যে অনেক কম ঘুমায়, এটা কি স্বাভাবিক?”

– এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি আমাদের প্রায় সময়ই হতে হয়। ‘সন্তানের ঘুম’ সবসময়ই বাবা-মার জন্য একটি স্ট্রেস। আর অভিভাবকের ঘুমের সাথে যদি সন্তানের ঘুমের রুটিন না মিলে, তাহলে তো কথাই নেই! এই মহামারীতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আরো প্রকটভাবে চোখে পড়ছে রাত জাগার সংস্কৃতি! তাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সুস্থ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত করতে ঘুমের স্বাভাবিক রুটিন পালন খুবই জরুরি।

সন্তানের ঘুমের রুটিন ঠিক করতে হলে, প্রথমেই জানতে হবে, বয়স অনুযায়ী একটি শিশুর ঘুমের চাহিদা কতটুকু। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন অনুযায়ী,

৩-৫ বছরের একটি শিশুর ১০-১৩ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন
৬-১৩ বছরের একটি শিশুর ৯-১১ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন
১৪-১৭ বছরের একটি শিশুর ৮-১০ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৬-৮ ঘন্টা ঘুম যথেষ্ট

উল্লখ্য যে, অনেকের ক্ষেত্রেই ঘুমের চাহিদা কম-বেশি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার শিশুর চাহিদা বুঝে আপনাকে রুটিন করতে হবে। যে কৌশলগুলো অভিভাবক হিসেবে আপনাকে সন্তানের ঘুমের অভ্যাস ঠিক করে, আপনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে ~

১. বিছানায় যাওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে দিন: সন্তানের ঘুমানোর সময় আপনি প্রথমেই নির্দিষ্ট করতে পারবেন না, কিন্তু কোন সময় বাসার সব লাইট বন্ধ হবে, সে আরামদায়ক পোশাকে, বিছানায় যাবে সেটি আপনি নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন। প্রথমেই আপনার কাঙ্খিত সময়কে নির্দিষ্ট না করে, যে সময় সে এখন ঘুমাতে যায়, তার থেকে ১৫-২০ মিনিট এগিয়ে আনুন। এরপর ধীরে ধীরে এক থেকে দুই সপ্তাহের মাঝে আপনার কাঙ্খিত সময় ফিক্স করুন।

২. বাসার সবাই কাছাকাছি সময়ে ঘুমাতে যাওয়া: বাচ্চা যদি দেখে যে, বাসার বাকিরা জেগে আছে কিন্তু তাকে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই বিদ্রোহ ঘটতে পারে! তাই ভালো হয় যদি বাসায় সবাই কাছাকাছি সময় নিজের রুমে চলে যায়। এতে সন্তান নিজেকে একা মনে করে না এবং বাসায় একটি সাধারন নীতি বজায় থাকে।

৩. স্ক্রিন টাইম-আউট সময় নির্দিষ্ট করা: সন্তান বিছানায় যাওয়ার অন্তত ১ ঘন্টা আগে সকল প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন। মোবাইলের স্ক্রিনের আলো, আমাদের মেলাটোনিন নামক হরমোন নি:সরণে ব্যঘাত সৃষ্টি করে, যেই হরমোন আমাদের স্বাভাবিক ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, যেসকল শিশুরা মোবাইল ব্যবহারের ১ ঘণ্টার মধ্যে ঘুমাতে যায়, ২২% ক্ষেত্রে তাদের ঘুম ব্যাহত হয়।

৪. ঘুমের আগে কিছু অভ্যাস অনুশীলন করুন: প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি নির্দিষ্ট অভ্যাসের অনুশীলন ঘুমে সাহায্য করে। পরিবারের সবাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে একসাথে প্রার্থনা করা, একসাথে বসে কোন বিষয়ে কথা বলা, গল্পের বই পড়া, গোসল করা, গরম দুধ পান করা, ইত্যাদি অভ্যাস নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে সাহায্য করে।

৫. সন্তানকে শারীরিক পরিশ্রান্তিতে অভ্যস্ত করা: শিশুকে এমন খেলাধুলো করানো সবসময় উত্তম, যেগুলোতে শারীরিক পরিশ্রম হয়। বিল্ডিংয়ের বা এলাকার অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে ফুটবল, ক্রিকেট বা দৌড়াদৌড়ি করা হয় এমন খেলায়, একদিকে যেমন মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে শারীরিক পরিশ্রম হওয়ার ফলে, দিনশেষে শিশু পরিশ্রান্ত হয়ে যায়, এবং ঘুমের অভ্যাস ঠিক হতে সাহায্য হয়।

মনে রাখতে হবে, সন্তানের ঘুমের রুটিন কখনোই ১ দিনে বা ১ সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে না! কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না, এবং কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। একই রুটিন পালনে লেগে থাকলে, ধীরে ধীরে শিশুর অভ্যাস আমার কাঙ্খিত সময়ে চলে আসবে।

সঠিক সময়ে, যথেষ্ট ঘুম না হলে বাচ্চা খিটখিটে হয়ে যেতে পারে, মনোযোগের ঘাটতি হতে পারে। তাই, বড়দের মতো বাচ্চাদের জন্যও পরিমিত ঘুম অত্যন্ত জরুরি; কখনো কখনো বড়দের চেয়ে বেশি জরুরি! আপনি যত অল্প বয়সে সন্তানের ঘুমের রুটিন ঠিক করবেন, বিষয়টি তত সহজ হবে!

Leave a Comment